প্রত্যয় ডেস্ক: আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানকে হত্যা করে সাবেক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দখলের একটি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়ার দাবি করেছে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস (এনএসএস)। শনিবার এক বিবৃতিতে এনএসএস জানিয়েছে, সংস্থাটির সাবেক প্রধান আর্তুর ভেনেতসিয়ান, রিপাবলিকান পার্টির সংসদীয় দলের প্রধান ভাহরাম বাঘদাসারিয়ান এবং যুদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক আশোট মিনাসায়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজনরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করছিলেন এবং ইতোমধ্যেই তার জায়গায় নতুন প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনাও চলছিল। গত কয়েকদিন থেকেই ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান। প্রায় ছয় সপ্তাহব্যাপী লড়াই শেষে বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখল আজারবাইজানের হাতে ছেড়ে দেয়ায় তার পদত্যাগ দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ চলছে আর্মেনিয়ায়।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে পাশিনিয়ান বলেছিলেন, আরও ভূমি হারানো ঠেকাতে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তিতে সই করা ছাড়া তার সামনে আর কোনও উপায় ছিল না। এই পরিস্থিতির জন্য ব্যক্তিগত দায় নিলেও এখনই পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, আজারবাইজানের হাতে ভূমি সমর্পণের সময়সীমা শেষ হয়ে আসায় নাগোরনো-কারাবাখ ছাড়ছেন জাতিগত আর্মেনীয়রা। গত শনিবার অঞ্চলটি ছেড়ে যাওয়ার আগে তাদের অনেকেই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। আর্মেনিয়া জানিয়েছে, আজারবাইজানের সঙ্গে যুদ্ধে তাদের ২ হাজার ৩১৭ জন সৈন্য নিহত হয়েছেন। তবে এখনও হতাহতের কোনও তথ্য জানায়নি আজারবাইজান।
নাগোরনো-কারাবাখের দখল নিয়ে গত সেপ্টেম্বরের শেষদিকে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। এর আগে কয়েক দফায় অস্ত্র ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও তা টেকেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশ দু’টির মধ্যে এই বিবাদ চলছিল। তাদের এই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটিকে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের বলে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এতদিন তার নিয়ন্ত্রণ ছিল আর্মেনীয় নৃ-গোষ্ঠীর হাতে। নব্বইয়ের দশকের যুদ্ধের পর অঞ্চলটির দখল নেয় আর্মেনিয়া।
নাগোরনো-কারাবাখ নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করলেও তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। ফলে আইনগতভাবে সেটি আজারবাইজানের অধীনেই থেকে যায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর হঠাৎই ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় আর্মেনীয়-আজারি সেনাদের মধ্যে। একাধিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মাসব্যাপী চলে এ লড়াই, হতাহত হয় দুই পক্ষের অসংখ্য সেনা। অবশেষে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় গত সোমবার আর্মেনিয়া সরকার নাগোরনো-কারাবাখের দখল ছেড়ে দিতে রাজি হলে একপ্রকার বিজয় নিশ্চিত হয় আজারবাইজানের।